মুন্সীগঞ্জের তালতলা-গৌরগঞ্জ খালে প্রশাসন বাল্কহেড চলাচল নিষিদ্ধ ঘোষনা করলেও বাল্কহেড চালকদের কাছ থেকে টাকা চাঁদা নিয়ে একটি চক্র খালে বাল্কহেড চলচলে সহয়তা করছে। সকাল হতে গভীর রাত পর্যন্ত প্রতিদিন খালে বৈধ ওবৈধ শতাধিক নৌযান বাল্কহেড নিয়মিত যাতায়াত করছে বলে জানায় খালের পাড়ের বাসিন্দারা।
গত ৫ আগষ্ট এই খালে বাল্কহেডের ধাক্কায় পিকনিকের একটি ট্রলার ডুবে নারী ও শিশুসহ ১০ জন নিহত হওয়ার পরেও টনক নড়ছে না কারো। দূর্ঘটনার কারনে খালে বাল্কহেড চলাচল নিষিদ্ধ ঘোষণা করে মুন্সীগঞ্জ জেলা প্রশাসন। প্রশাসনের কোন নজড় দাড়ি না থাকায় অবাধে চলছে বাল্কহেড গুলো আশংকায় করা হচ্ছে বড় ধরনের দূর্ঘটনার। এদিকে টঙ্গীবাড়ি উপজেলার বালিগাঁও গ্রামের ভূমিদশ্যূ রাজন মুন্সী বাল্কহেড চালকদের কাছ হতে ১৫০০ থেকে ৩০০০ টাকা নিয়ে বাল্কহেড চলাচলে সহয়তা করছেন বলে বাল্কহেডের চালক ও স্থাণীয়দের সুত্রে জানাগেছে।
এলাকার ভুক্তভোগীদের অভিযোগ বাল্কহেড চলাচলের কারণে তাদের বাড়িঘর ভেঙে যাচ্ছে তারা প্রতিবাদ করলে রাজন মুন্সী ও তার চাচাতো ভাই সুজন মুন্সী তাদের হুমকি ধামকি দিচ্ছে। গত শুক্রবার খালে চলাচলকারী ৩টি বাল্কহেড স্থাণীয়রা আটক করেন। পরে সুজন মুন্সী ও তার চাচাতো ভাই রাজন মুন্সী বাল্কহেড আটককারীদের উপর ক্ষিপ্ত হয়। তারা বাল্কহেড আটককারীদের তুলে নিয়ে আনার হুমকি প্রদান করে। সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, তালতলা-গৌরগঞ্জ খালে অহরহ চলছে বাল্কহেড। বিকাল ৫ টার দিকে স্থাণীয়রা একটি বাল্কহেড আটক করে।
বাল্কহেডের চালক আল আমিন বলেন, এ খাল দিয়ে বাল্কহেড চলাচল নিষিদ্ধ সেটা আমরাও জানি। আমাদের এই খাল দিয়ে বাল্কহেড চালাতে রাজন মুন্সী নিয়ে আসছে। আমরা প্রতিদিন এ খাল দিয়ে একবার বাল্কহেড চালিয়ে গেলে সে আমাদের কাছ হতে ১৫০০ করে টাকা নেয়। বালিগাঁও বাজার ও তার আশেপাশের এলাকায় সে সহ আরো কিছু লোকজন থাকে যারা আমাদের কাছ হতে টাকা নেয়। স্থাণীয় লৌহজং উপজেলার বাসুদিয়া গ্রামের হোসেন দেওয়ান বলেন, এই খালে বাল্কহেড চলাচল নিষিদ্ধ। কিন্তু বালিগাঁও গ্রামের রাজন মুন্সী টাকা খেয়ে এ খালে বাল্কহেড চলতে দিচ্ছে। এতে আমাদের বাড়িঘর ভেঙ্গে যাচ্ছে।
বাসুদিয়া গ্রামের অপর বাসিন্দা ফারুক শেখ বলেন, খালে বাল্কহেড চলাচল নিষিদ্ধ। কিন্তু রাজন মুন্সী টাকা খেয়ে বাল্কহেড এখান দিয়ে চলতে দিচ্ছে। ঢেউয়ে আমাদের বাড়িঘর সব ভেঙে যাচ্ছে। কিন্তু আমরা প্রতিবাদ করলে সে আমাদের হুমকি দেয় বাড়ি থেকে ধরে নিয়ে যাবে।
স্থাণীয় বাসিন্দা আব্দুল মালেক বলেন, আমার বাড়ি একবার এ খালে ভেঙে গেছে। এখন অন্য জায়গায় জাইয়া বাড়ি করছি। প্রশাসন এই খালে বাল্কহেড চলাচল নিষিদ্ধ করছে। কিন্তু তারপরেও বাল্কহেড খাল দিয়ে দিনরাত চলছে। আমরা বাল্কহেড চালাতে নিষেধ করলে রাজন মুন্সী আসে। এসে বলে সরকারি খালে বাল্কহেড চলবেই তুমি কিছু করতে পারবে না। বেশি বাড়াবাড়ি করলে তোমাদের বাড়ি থেকে ধরে নিয়ে যাব।
আব্দুল মালেকের স্ত্রী জেসমিন বলেন, আমার একটা ছেলে নাই। আমার বাড়ি খালে ভেঙে যাচ্ছে। নতুন করে যে বাড়িঘর করবো সেই টাকা পয়সা নাই। রাজন মুন্সী আমাদের বাড়ির পাশ দিয়ে বাল্কহেড নিয়ে আমাদের বাড়িঘর ভেঙ্গে ফেলতাছে।
বাল্কহেড থেকে তোলা চাঁদা যায় কোথায় কারা এর ভাগবাটোয়ারা করে। এ ব্যাপারে অভিযুক্ত রাজন মুন্সী বলেন, বাল্কহেড হতে চাঁদা তোলার কাজে ৭০/৮০ জনের একটি সিন্ডিকেট জড়িত। আমি চাঁদা তোলার সাথে জড়িত নই। এ ব্যাপারে টঙ্গীবাড়ি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মু. রাশেদুজ্জামান বলেন, বাল্কহেড চলচলের বিষয়টি জানতে পেরে আমরা ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠিয়েছিলাম। পুলিশের উপস্থিতির টের পেয়ে তারা পালিয়ে যায়।