ভারতের ১৮ তম লোকসভা নির্বাচনের ফলাফল প্রকাশিত হয়েছে। লোকসভার ৫৪৩ আসনের ফলাফলে এগিয়ে রয়েছে ক্ষমতাসীন বিজেপি ও এর জোট জাতীয় গণতান্ত্রিক জোট (এনডিএ)। তবে এবারের নির্বাচনে বেশ চমক দেখিয়েছে গত দুই লোকসভা নির্বাচনে বাজে ফলাফল করা কংগ্রেসও। দলটি পেয়েছে ৯৯ টি আসন।
ভারতীয় সংবাদমাধ্যম হিন্দুস্তান টাইমসের খবরে বলা হয়েছে, জোট হিসেবে এনডিএ- এর দখলে গেছে ২৯৩টি আসন এবং বিরোধী জোট ‘ইন্ডিয়ার’ দখলে গেছে ২৩৩টি আসন। এছাড়া অন্যান্য দলগুলো ও স্বতন্ত্র প্রার্থীরা মিলে পেয়েছে ১৭টি আসন।
তবে দল হিসেবে এককভাবে সবচেয়ে বেশি ২৪২টি আসনে জিতেছে বিজেপি। এছাড়া তাদের জোটসঙ্গী দলগুলোর মধ্যে তেলেগু দেশাম পার্টি পেয়েছে ১৬টি এবং বিহারের নিতীশ কুমারের দল জনতা দল (ইউনাইটেড) পেয়েছে ১২টি আসন।
এদিকে, কংগ্রেসের নেতৃত্বে বিরোধী জোট ইন্ডিয়া পেয়েছে ২৩১টি আসন। এরমধ্যে কংগ্রেস এককভাবে পেয়েছে ৯৯টি আসন। আর জোট শরিক উত্তর প্রদেশের সমাজবাদী পার্টি পেয়েছে ৩৬টি, পশ্চিমবঙ্গের ক্ষমতাসীন দল তৃণমূল কংগ্রেস পেয়েছে ২৯টি, দ্রাবিড়া মুনেত্রা কাজাগাম পেয়েছে ২২টি আসন। এর বাইরে শিব সেনা (উদ্ধব ঠাকরে) পেয়েছে ৯টি আসন এবং শারদ পাওয়ারের ন্যাশনাল কংগ্রেস পার্টি পেয়েছে ৮টি আসন।
এই পরিস্থিতিতেও কংগ্রেস নেতৃত্বাধীন জোট ইন্ডিয়ার পক্ষে জোট সরকার গঠনের সম্ভাবনা রয়েছে। বিষয়টি নিয়ে চলছে আলোচনা। এই সম্ভাবনা মূলত বিহারের জনতা দল (ইউনাইটেড) ও তেলেগু দেশাম পার্টিকে যদি কংগ্রেস জোটটি নিজেদের পক্ষপুটে আনতে পারে তবেই বাস্তবায়ন সম্ভব। বাস্তবে এই দুটি দলই মূলত ‘কিং মেকারের’ ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছে। এই দুটি দলকে ছাড়া খোদ বিজেপিও একা সরকার গঠন করতে পারবে না।
নিতীশ কুমারের জেডিইউ এবং চন্দ্রবাবু নাইডুর টিডিপির মোট আসনসংখ্যা ২৮টি। সে ক্ষেত্রে এই দুটি দল বিজেপির এনডিএ জোট থেকে বের হয়ে আসলে জোটের আসনসংখ্যা হবে ২৬৭টি। যা সরকার গঠনের চেয়ে মাত্র ৫টি আসন কম। বিপরীতে এই দুটি দল ইন্ডিয়া জোটে যোগ দিলেও তাদের আসন হবে ২৫৯টি। তারপরও আরও ১৩টি আসন বাকি থাকবে সরকার গঠনের জন্য।
এ ক্ষেত্রে বাকি যে দলগুলো বা স্বতন্ত্র (১৭ টি) প্রার্থীরা আছেন তারা ইন্ডিয়া জোটে যোগ দিলে তাদের জন্য সরকার গঠন সম্ভব হতে পারে। সে ক্ষেত্রে ইন্ডিয়া জোটের আসন হবে ২৭৬টি। তবে যেই সরকার গঠন করুক না কেন ভারতের আগামী লোকসভা একটি ‘হাং পার্লামেন্ট’ বা ঝুলন্ত সংসদ হতে যাচ্ছে।
কংগ্রেস তথা ইন্ডিয়া জোট সরকার গঠন করবে নাকি বিরোধী দলের সিটেই থাকবে তা চূড়ান্ত হবে আজ (বুধবার)। জোটের নেতারা আজ বৈঠক করবেন। সেই বৈঠকেই সিদ্ধান্ত নেয়া হবে সরকার গঠন বা বিরোধী দলে থাকার বিষয়টি। বিহারের নিতীশ কুমারের দল জনতা দল (ইউনাইটেড) এবং চন্দ্রবাবু নাইডুর তেলেগু দেশাম পার্টির সঙ্গে যোগাযোগ করা হবে কিনা সে বিষয়েও সিদ্ধান্তে নেয়া হবে আজ।
ঠিক এমনটাই ভাবছেন কংগ্রেসের পোস্টার বয় রাহুল গান্ধী। তিনি বলেছেন, ‘যা সিদ্ধান্ত নেয়ার তা সর্বসম্মতভাবেই নেয়া হবে।’ নিতীশ ও চন্দ্রবাবুর দলের সঙ্গে যোগাযোগের বিষয়টি ইঙ্গিত করে রাহুল বলেন, ‘এটি খুবই ভালো বিষয় হবে।’ মঙ্গলবার তিনি বলেন, ‘আজ হয়তো আমাদের কাছে (জোট গঠনের সিদ্ধান্ত) কোনো জবাব নেই, তবে কাল আমরা জবাব পেয়ে যাবো।’
সোজা কথায় রাহুল গান্ধী বিষয়টিকে উড়িয়ে দেননি। প্রায়ই একই ধরনের অবস্থান ইন্ডিয়া জোটের অংশীদার ন্যাশনাল কংগ্রেস পার্টির নেতা শারদ পাওয়ারের। তিনি বলেছেন, তিনি এখনো চন্দ্রবাবু নাইডু বা নিতীশ কুমারের সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করেননি। তবে কংগ্রেসের প্রধান মল্লিকার্জুন খাড়গে এবং সীতারাম ইয়েচুরির সঙ্গে কথা বলার পর এবং আজকের বৈঠকের পর তিনি এ বিষয়ে কথা বলতে পারবেন।
শারদ পাওয়ারের কথা থেকে এটি স্পষ্ট যে, ইন্ডিয়া জোট সরকার গঠন বা বিরোধী দলে থাকার বিষয়টি নিয়ে এখনো সিদ্ধান্ত না নিলেও তারা সরকার গঠনের সম্ভাবনা উড়িয়ে দেয়নি। তবে রাহুল সরকার গঠন বা বিরোধী দলে থাকার বিষয়টি নিয়ে রাখঢাক করলেও শিব সেনার প্রধান উদ্ধব ঠাকরে বিষয়টি নিয়ে খোলাখুলি কথা বলেছেন। উদ্ধব ঠাকরে বলেছেন, ‘ইন্ডিয়া জোটকে অবশ্যই সরকার গঠনের ক্ষেত্রে দাবি রাখতে হবে।’ আজকের বৈঠকে বিষয়টি এজেন্ডায় রাখবেন বলেও জানিয়েছেন তিনি।
সংবাদ সূত্র : চ্যানেল 24
www.dailykhoborerdak.com
ই-মেইল:
news.Khoborerdak@gmail.com