বাড়ি-ঘরের মায়া মনের মধ্যে রেখেই স্বজনদের নিয়ে নিরাপদে থাকতে জড়ো হয়েছিলেন আশ্রয়কেন্দ্রে; আতঙ্কের রাত পেরিয়ে সকালের ভাগেও প্রবল ঘূর্ণিঝড় ‘রেমাল’ এর দাপট চলতে থাকায় আর ফেরা হয়নি। বিকালের দিকে বৃষ্টি মাথায় উপকূলবাসীদের অনেকে যখন ফিরেছেন নিজেদের প্রিয় আঙ্গিনায় ঝড়ের তাণ্ডবের ক্ষতচিহ্ন দেখতে হয়েছে তাদের।
একশ কিলোমিটারের বেশি বাতাসের বেগ নিয়ে ধেয়ে আসা ঝড়ের সঙ্গে জলোচ্ছ্বাস আর ৫ থেকে ৭ ফুট উঁচু বানের তোড়ে ধ্বসে পড়েছে অনেকের ঘর; গাছপালা ভেঙে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ঘর, নিচু এলাকার বাড়ি ডুবেছে পানিতে আর ভেসে গেছে মাছের ঘের। উপকূলজুড়ে ভেসে উঠতে শুরু করেছে ঝড়ের রেখে যাওয়া ক্ষত।
ক্রমে প্রবল হয়ে ওঠা এই ঘূর্ণিঝড় ‘রেমাল’ এর তাণ্ডবে উপকূলের জেলাগুলো ছাড়াও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে দেশের প্রায় এক তৃতীয়াংশ জেলার শতাধিক উপজেলা। ঝড় উপকূল পার হওয়ার সময় জানমালের ব্যাপক ক্ষতি করে গেছে; জলোচ্ছ্বাসে প্লাবিত হয়েছে বিস্তীর্ণ জনপদ।
জোয়ারের সময় ঝড়ের তোপ বাড়িয়েছে ক্ষতি; উপকূলের একের পর এক এলাকায় বেড়িবাধ ও বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাধ ভেঙে প্লাবিত হয়েছে শত শত গ্রাম, ভেসে গেছে মাছের ঘের।
সোমবার ঘূর্ণিঝড়ের শেষটায় এবং রোববার উপকূলের কাছাকাছি আসার পর থেকে বানের জলে ভেসে, দেয়াল ও গাছ চাপায়, আশ্রয় কেন্দ্রে যাওয়ার সময় অসুস্থ হয়ে ছয় জেলায় এক নারী ও শিশুসহ অন্তত ১২ জনের মৃত্যুর খবর এসেছে। সরকারি হিসাবেই ধ্বংস হয়েছে ৩৫ হাজার বাড়িঘর।
প্রতিবেশী ভারতেও প্রাণহানির কারণ হয়েছে রেমাল। পশ্চিমবঙ্গের কয়েকটি ঝড়ো বাতাসে বিদ্যুতের তার ছিঁড়ে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে অন্তত ছয়জনের মৃত্যুর খবর দিয়েছে কলকাতার দৈনিক আনন্দবাজার।
ঝড়ের কারণে ক্ষয়ক্ষতির পূর্ণাঙ্গ চিত্র পেতে সময় লাগবে আরও কিছু। তবে খামারি আলতাফ হোসেন মিঠুর মত অনেকেই বড় ধরনের ক্ষতির মুখে পড়েছেন।
ঝড় চলে যাওয়ার পর বৃষ্টির তোড় কমে এলে সাতক্ষীরার শ্যামনগরের কলবাড়ি গ্রামের চিংড়ি চাষি ও মুরগির খামারি মিঠু দাঁড়িয়ে ছিলেন ভেঙে যাওয়া মুরগির খামারের সামনে। বললেন, রোববার রাতে তার খামারসহ দুটি ঘর ভেঙে গেছে। সেখানে থাকা দুই শতাধিক মুরগি মারা গেছে।
আয়ের অন্যতম উৎস খামারের এমন বিধ্বস্ত অবস্থায় বিপর্যস্ত হয়ে পড়তে শুরু করেছেন তিনিও। উপকূলের এলাকাগুলোতে ক্ষয়ক্ষতির এমন চিত্রের তথ্যই প্রাথমিকভাবে মিলতে শুরু করেছে। কোথাও কোথাও এর চেয়েও বড় ক্ষতির মুখে পড়েছেন অনেকে।
গত ২২ মে পূর্বমধ্য বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন পশ্চিমমধ্য বঙ্গোপসাগর এলাকায় একটি লঘুচাপ সৃষ্টি হয়, যা ধীরে ধীরে শক্তি সঞ্চয় করে সুস্পষ্ট লঘুচাপ, নিম্নচাপ, গভীর নিম্নচাপ দশা পেরিয়ে ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হয় শনিবার সন্ধ্যায়। তখন এর নাম দেওয়া হয় রেমাল। রোববার সকালে ঘূর্ণিঝড়টি পরিণত হয় প্রবল ঘূর্ণিঝড়ে।
এর প্রভাবে রোববার বিকাল থেকেই উপকূলীয় এলাকায় ব্যাপক বৃষ্টিপাত শুরু হয়। পরদিন সকাল থেকে সারাদেশেই বৃষ্টিপাতের প্রবণতা বেড়ে দুর্বল হয়ে আসে রেমাল।
সোমবার ঝড়ের দাপট কমে এলে আশ্রয়কেন্দ্র কিংবা স্বজনদের বাড়ি থেকে যখন তারা নিচু এলাকায় নিজেদের বাড়িতে ফিরেছেন, তখন দেখতে পেয়েছেন বিধ্বস্ত ঘর, ভাঙা বাড়ি। ভেসে গেছে মাছের ঘের, পানির তোড়ে বাধ ভেঙে ডুবে গেছে ফসলের ক্ষেত।
ক্ষতির পাশাপাশি প্রায় দুই দিন থেকে ভোগান্তিও কম ছিল না উপকূলবাসীর। ঝড়ের কারণে বড় বিপর্যয় এড়াতে আগের দিনেই বিদ্যুৎ বন্ধ রাখা হয়েছিল অনেক এলাকায়; অন্ধকারে ডুবে ছিলেন ৩০ লাখ গ্রাহকের পরিবার। ঝড় আঘাত হানার পর থেকে সোমবার রাত পর্যন্ত এ সংখ্যা বেড়ে হয়েছে পৌনে তিন কোটি। বিদ্যুৎহীন অবস্থা সবখানে রাতেই কাটছে না।
বিদ্যুৎ না থাকায় আস্তে আস্তে মোবাইল নেটওয়ার্কও বন্ধ হয়ে যায়। ঝড়ের আতঙ্কের মধ্যে স্বজনদের অবস্থা জানতে না পারার উৎকণ্ঠাও সঙ্গী হয়েছিল তাদের। সংবাদ সংগ্রহে ঢাকা থেকে উপকূলের সংবাদকর্মীদের সঙ্গে যোগাযোগেও বেগ পেতে হয়।
দীর্ঘ সময়জুড়ে চলা রেমালের তাণ্ডবে রাস্তায় গাছ পড়ে থাকায় অনেক জায়গায় সড়ক যোগাযোগও বন্ধ রয়েছে।
রেমালের দাপট দেখে বরগুনা সদরের নলটোনা গ্রামের সেলিম বলেন, “বাপ-দাদার জাগাজমি বাড়িঘর অনেক আগেই নদী ভাঙনে চইল্লা গ্যাছে। হ্যারপর কোনোভাবে একটা ঘর তুইল্লা পোলা-মাইয়া লইয়া আল্লাম (বসবাস করেছি)। এইবারের বইন্নায় হেইডাও লইয়া গ্যাছে। এহন আল্লাহ ছাড়া মোগো দ্যাহার কোনো উপায় নাই।”
শুধু গ্রাম নয়, জেলা শহর ও নগরী ডুবিয়ে মানুষকে দুর্ভোগের মধ্যে ফেলেছে ঘূর্ণিঝড় রেমাল। বরগুনা জেলা শহরের বঙ্গবন্ধু সড়কের ব্যবসায়ী ইকবাল হোসেন বলেন, “এইবারের বন্যায় যেভাবে পানি উঠছে, গত ১০ বছরে কোনো বন্যায় এইভাবে পানি দেখা যায়নি।”
তিনি বলেন, পানিতে প্লাবিত হয়ে তার ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের অন্তত দুই লাখ টাকা ক্ষতি হয়েছে।
বরিশাল নগরীও ডুবেছে বানের পানিতে। নগরীর ব্রাউন্ড কম্পাউন্ড এলাকার বাসিন্দা ফেরদৌস রহমান বলেন, “রোববার মাঝরাত থেকে বিদ্যুৎ নেই, মোবাইল নেটওয়ার্ক নেই। রাস্তায় হাঁটু পানি অসহায় অবস্থায় রয়েছি।”
উপকূলের জেলাগুলোর মত বানের পানিতে না ডুবলেও টানা বৃষ্টিতে জলাবদ্ধতা তৈরি হয় রাজধানী ঢাকার অনেক স্থানে।
উপকূলের জেলাগুলোর মত বানের পানিতে না ডুবলেও টানা বৃষ্টিতে জলাবদ্ধতা তৈরি হয় রাজধানী ঢাকার অনেক স্থানে।
ঝড়ে উপকূলের আরেক বড় নগরী খুলনার অবস্থায় শোচনীয়। ভারি বৃষ্টিতে নগরের খুলনার অধিকাংশ সড়ক ও নিম্নাঞ্চল ডুবে গেছে। অনেক বাড়ির নিচতলা ও দোকানঘরও পানিতে নিমজ্জিত হয়েছে।
কতটা হয়েছে ক্ষতি
দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের তথ্য মতে, রেমালে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের সংখ্যা ৩৭ লাখ ৫৮ হাজার ৯৬ জন। সম্পূর্ণভাবে বিধ্বস্ত হয়েছে ৩৫ হাজার ৪৮৩টি এবং আংশিকভাবে বিধ্বস্ত হয়েছে ১ লাখ ১৪ হাজার ৯৯২টি ঘরবাড়ি।
ঝড়ে বিতরণ লাইন লণ্ডভণ্ড হয়ে উপকূলীয় জেলাগুলোতে দুই কোটি ৭০ লাখ গ্রাহক বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছেন; এর মধ্যে কেবল পল্লী বিদ্যুতের বিতরণ এলাকায় রয়েছেন ২ কোটি ৬৬ লাখ ২৬ হাজার ৫৫০ জন।
ঘূর্ণিঝড় রেমালের আঘাতের আগে-পরে বিদ্যুৎ না থাকায় ৬৪ জেলার ২২ হাজার মোবাইল সাইট (টাওয়ার) অচল হয়ে পড়েছে। উপকূলীয় জেলাগুলোর পাশাপাশি দেশের মধ্য ও উত্তরাঞ্চলের জেলাগুলোতেও অনেক মোবাইল সাইট বন্ধ রয়েছে।
>> ক্ষতিগ্রস্ত ১৯ জেলা- খুলনা, সাতক্ষীরা, বাগেরহাট, ঝালকাঠি, বরিশাল, পটুয়াখালী, পিরোজপুর, বরগুনা, ভোলা, ফেনী, কক্সবাজার, চট্রগ্রাম, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, চাঁদপুর, নড়াইল, গোপালগঞ্জ, শরীয়তপুর ও যশোর।
>> ক্ষতিগ্রস্ত উপজেলার সংখ্যা ১০৭ এবং ইউনিয়নের ও পৌরসভা ৯১৪টি।
>> সাতক্ষীরা, বাগেরহাট, বরগুনাসহ কয়েক জেলায় বেড়িবাঁধে ভাঙন দেখা দিয়েছে। নিম্নাঞ্চলে পানি ঢুকে প্লাবিত হয়েছে শত শত গ্রাম।
>> খুলনার দাকোপ ও কয়রা এলাকায় অন্তত ২০টি গ্রাম প্লাবিত হওয়ার তথ্য এসেছে। সেই সঙ্গে ভেসে গেছে শতাধিক চিংড়ির ঘের; ভেঙে গেছে কয়েক’শ কাঁচা ঘরবাড়ি ও দোকানপাট।
নজর এখন দুর্যোগ পরবর্তী কর্মকাণ্ডে: প্রতিমন্ত্রী
দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী মহিববুর রহমান সোমবার বিকালে সচিবালয়ে ব্রিফিংয়ে বলেন, সবচেয়ে কম যেন ক্ষতি হয় সে প্রয়াসে সবাই একযোগে কাজ করেছে। অনেক এলাকায় এখনও জলাবদ্ধতা আছে। মাছের ঘের, গাছপালা নষ্ট হয়েছে। ক্ষয়ক্ষতির তথ্য পর্যায়ক্রমে বিস্তারিত জানানো হবে।
“সকলের সহযোগিতায় আমরা এ দূর্যোগ কার্যক্রম মোকাবেলা করতে সক্ষম হয়েছি বলে আমি মনে করি। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর দিক নির্দেশনায় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় গত কয়েকদিন ধরে ব্যাপক প্রস্তুতি গ্রহণ করে যার ফলে বড় ধরনের কোনো ক্ষয়ক্ষতি হয়নি।“
দুর্যোগপূর্ব কার্যক্রমের কাজ শেষে এখন দুর্যোগ পরবর্তী কর্মকাণ্ডে জোর দেওয়ার কথা বলেন প্রতিমন্ত্রী।
প্লাবিত সুন্দরবন, জীববৈচিত্র্য
বন অধিদপ্তরের খুলনা অঞ্চলের বন সংরক্ষক মিহির কুমার দো বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “এখনও সুন্দরবনে ঝড় ও প্রচণ্ড বৃষ্টি হচ্ছে। তাই আমরা সব জায়গায় যেতে পারিনি। তবে সুন্দরবনের অধিকাংশ জায়গা নোনাপানিতে ডুবে গেছে। এবং অধিকাংশ জায়গা ৮-১০ ফিট উচ্চতায় পানিতে প্লাবিত হয়েছে।”
অবকাঠামোগত ক্ষয়ক্ষতির পাশাপাশি বন্যপ্রাণী মৃতের তথ্যও তুলে ধরেন তিনি।
“আমরা আশঙ্কা করছি বন্যপ্রাণীবিশেষ করে বাঘ-হরিণ শাবকসহ সব বন্যপ্রাণীরা আশঙ্কা রয়েছে। এছাড়া কিছু অবকাঠামোগত ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। সেগুলো অ্যাড্রেস করতে আমাদের আরও সময় লাগবে।
”আমরা আগে ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণ এবং নিরাপত্তার বিষয়টা দেখব। এরপর সামগ্রিকভাবে সরকারের কাছে উপস্থাপন করব, তারপর পর্যায়ক্রমে সমাধানের ব্যবস্থা করা হবে।”
জোয়ারের সময় ঝড়ের তোপ বাড়িয়েছে ক্ষতি
বুয়েটের বন্যা ও পানি ব্যবস্থাপনা ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক একেএম সাইফুল ইসলাম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “কতটা ক্ষতি হল সেটা তো এখন অ্যাড্রেস করা যাবে না। যে সমস্ত জায়গায় কোনো বেড়িবাঁধ নেই, সেখানে তো পানি ঢোকে- সেসব জায়গায় বেড়িবাধ করা দরকার। আর যেসমস্ত জায়গায় বেড়িবাধ দুর্বল সেখানে ভেঙে পানি ঢুকে বিরাট এরিয়া প্লাবিত হচ্ছে। ওই জায়গাগুলো একটু নজর দেওয়া দরকার, মেরামত করা দরকার- প্রতিবছরই যেহেতু ঘূর্ণিঝড় আসছে।”
তিনি বলেন, ঘূর্ণিঝড় এখন তীব্র বৃষ্টি নিয়ে আসছে। এখন উপকূলীয় এলাকায় আলাদাভাবে নজর দেওয়া উচিত। আশ্রয়কেন্দ্রের সংখ্যা বাড়ানো এবং মান উন্নত করা, উপকূল এলাকায় গাছ লাগানো দরকার।
“এখন যেহেতু জলবায়ু পরিবর্তনের একটা প্রভাব আছে, ক্লাইমেট চেইঞ্জ ফান্ড এসব ব্যবহার করে দ্রুততার ভিত্তি কাজগুলো শেষ করা দরকার। বনের ক্ষতি নিরূপণ করাটা একটু কঠিনই হয়ে যায়, স্যাটেলাইট ইমেজ বিশ্লেষণ করে দেখা যেতে পারে ক্ষতির পরিমাণটা।”
এই শিক্ষকের মতে, অনেক জায়গায় রাস্তা, বাধ ভেঙে যাচ্ছে-এগুলো সংস্কার করা দরকার। লবণ পানি ক্ষেতের এবং মাছের ঘেরসহ অন্যান্যর মারাত্মক ক্ষতি করে। এ সমস্যাও সমাধানের ব্যবস্থা করতে হবে। লবণ পানি সুপেয় পানিরও ক্ষতি করে।
তার আশঙ্কা এবার বেশি হবে ক্ষতি। বৃষ্টি ও জলোচ্ছ্বাস অনেক বেশি ছিল, কয়েকদিন আগে পূর্ণিমা গেছে; এটার একটা প্রভাব ছিল ঘূর্ণিঝড়ে।
অধ্যাপক সাইফুল বলেন, “এসব কারণে ক্ষতিটা এবার বেশি হবে। আর সুন্দরবনের ভেতর দিয়ে যাওয়ায় ক্ষতি কিছুটা কম হচ্ছে। এই ঘূর্ণিঝড়টাই যদি মাঝামঝি কোথাও দিয়ে যেত তখন আরো অনেক বেশি ক্ষতি হত।”
কেমন ছিল রেমাল, গতি ছিল কত
>> গত ২২ মে পূর্বমধ্য বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন পশ্চিমমধ্য বঙ্গোপসাগর এলাকায় একটি লঘুচাপ সৃষ্টি হয়, যা ধীরে ধীরে শক্তি সঞ্চয় করে সুস্পষ্ট লঘুচাপ, নিম্নচাপ, গভীর নিম্নচাপ দশা পেরিয়ে ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হয় শনিবার সন্ধ্যায়। তখন এর নাম দেওয়া হয় রেমাল।
>> রোববার সকালে ঘূর্ণিঝড়টি পরিণত হয় প্রবল ঘূর্ণিঝড়ে।
>> প্রবল ঘূর্ণিঝড় রেমাল রোববার রাতে খেপুপাড়া ও পশ্চিমবঙ্গের মাঝামাঝি এলাকা উপকূল অতিক্রম শুরু করে।
>> রোববার রাত দেড়টায় পটুয়াখালীতে সর্বোচ্চ গতিবেগ ১১১ কিলোমিটার রেকর্ড করা হয়।
>> সোমবার পুরোপুরি স্থলভাগে উঠে আসার পর বৃষ্টি ঝরিয়ে শক্তি হারিয়ে এ ঝড় স্থল নিম্নচাপে পরিণত হয়।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের পরিচালক আজিজুর রহমান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, সর্বোচ্চ ১১১ কিলোমিটার গতি বেগে খেপুপাড়া আর পটুয়াখালীতে রোববার রাতে আঘাত হানে।
“এটা যদি ভারতীয় উপকূল ঘেঁষে আসতো তাহলে একধরনের প্রভাব হত। এটা একদম সাগরের মাঝ বরাবর দিয়ে আসছে। যার জন্য সে শক্তি অর্জন করার জন্যও যোগান পেয়েছে, সেই সঙ্গে তার পথটাও সে ঠিক রেখেছে। খুব একটা আকাবাঁকা পথ বেছে নেয়নি।”
খুলনায় বিধ্বস্ত ৭৭ হাজার বাড়িঘর
রেমালের আঘাত ও ভারি বৃষ্টিতে খুলনার কয়রা, পাইকগাছা ও দাকোপ উপজেলায় বাঁধ ভেঙে লোকালয়ে পানি ঢুকছে। উপকূলের বিভিন্ন এলাকায় সোমবারও বৃষ্টি হয়েছে। উত্তাল রয়েছে নদ-নদী। কোথাও কোথাও বাঁধ উপচে পানি ঢুকছে লোকালয়ে। বড় বড় ঢেউ আছড়ে পড়ছে বাঁধের ওপর।
ঘূর্ণিঝড় চলাকালে বটিয়াঘাটা উপজেলায় গাছচাপা পড়ে লাল চাঁদ মোড়ল নামে একজনের মৃত্যু হয়েছে। তিনি গাওঘরা গ্রামের গহর মোড়লের ছেলে।
সোমবার বিকালে খুলনার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মো. নাজমুল হুসেইন খান বলেন, ৫৫টি পয়েন্টে বাঁধ ভেঙে এবং উপচে পড়া জোয়ারের পানিতে তলিয়ে গেছে অসংখ্য গ্রাম।
এ জেলার লাখো মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন। বিধ্বস্ত হয়েছে প্রায় ৭৭ হাজার ৯০৪টি বাড়িঘর। ঝড়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ৪ লাখ ৫২ হাজার ২০০ মানুষ। এ ছাড়া ফসলের মাঠ, ঘের-পুকুর লোনা পানিতে ভেসে গেছে।
খুলনা-৬ আসনের সংসদ সদস্য রশীদুজ্জামান মোড়ল বলেন, সুন্দরবন উপকূলীয় দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলীয় জনপদ পাইকগাছা ও কয়রায় বেশ কয়েকটি জায়গার বাঁধ ভেঙে গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। বহু গাছপালা ভেঙে পড়েছে।
স্থানীয় বাসিন্দা ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের তথ্যে জানা গেছে, কয়রা সদরের ৪ নম্বর কয়রা, গড়িয়াবাড়ি, ঘাটাখালী, হামখুড়ার গড়া, মদিনাবাদ লঞ্চঘাট; মহারাজপুর ইউনিয়নের মঠবাড়িয়া, সুতিয়া বাজার, পবনা; মহেশ্বরীপুর ইউনিয়নের কালীবাড়ি, শিঙেরচর, নয়ানী; উত্তর বেদকাশী ইউনিয়নের পাথরখালী; দক্ষিণ বেদকাশী ইউনিয়নের আংটিহারা, গোলখালী, জোড়শিং ও চরামুখা এলাকায় পানি উন্নয়ন বোর্ডের বেড়িবাঁধ উপচে পানি প্রবেশ করলেও সাধারণ মানুষের চেষ্টায় বাঁধ রক্ষা সম্ভব হয়।
তবে রাতভর চেষ্টা করেও মহারাজপুর ইউনিয়নের দশালিয়া ও মহেশ্বরীপুর ইউনিয়নের শিঙেরচর বাঁধের পানি আটকাতে পারেননি এলাকাবাসী। ভেসে গেছে শতাধিক চিংড়ির ঘের; ভেঙে গেছে কয়েকশ কাঁচা ঘরবাড়ি ও দোকানপাট।
দক্ষিণ বেদকাশি ইউনিয়নের মাটিয়াভাঙ্গা এলাকায় জোয়ারে বাঁধের কিছু অংশ ভেঙে গেছে। এতে ৫-৭টি গ্রামে নদীর পানি ঢুকে পড়েছে বলে ইউপি চেয়ারম্যান আছের আলী জানান।
পাইকগাছা উপজেলার গড়াইখালি ইউনিয়নের খুতখালী গ্রামে শিবসা নদীর বাঁধ ভেঙে বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত হয়েছে। এতে উপজেলার ছয়টি ইউনিয়নের অন্তত ২০টি স্থানে নদীর বাঁধ ভেঙে পানিবন্দী হয়ে পড়েছেন উপজেলার প্রায় এক লাখ মানুষ। সাগরের নোনাপানিতে প্লাবিত হয়েছে অর্ধশতাধিক গ্রাম।
খুলনা জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা আব্দুল করিম বলেন, ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের মধ্যে সহযোগিতা পৌঁছানোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
গোটা সুন্দরবন প্লাবিত, মোংলায় কাজ শুরু
সুন্দরবনের অধিকাংশ এলাকাই প্লাবিত হয়েছে। উঁচু জলোচ্ছ্বাসের কারণে বন্যপ্রাণী বিপদের মধ্যে পড়েছে।
সোমবার সুন্দরবন পূর্ব বিভাগের বাগেরহাটের শরণখোলা রেঞ্জের কটকা ও দুবলার চর থেকে দুটি মৃত হরিণ উদ্ধার করা হয়েছে বলে সুন্দরবনের বন সংরক্ষক (সিএফ) মিহির কুমার দো জানান।
তিনি বলেন, এ ছাড়া আরও নয়টি হরিণ আহত অবস্থায় উদ্ধার করা হয়েছে। তাদের চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে।
বাগেরহাট গোটা জেলাই প্রায় বিদ্যুৎহীন অবস্থার মধ্যে রয়েছে বলে জানিয়েছেন পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির জেলা মহাব্যবস্থাপক সুশান্ত রায়।
তিনি বলেন, ঝড়ের কারণে বিভিন্ন স্থানে গাছপালা ভেঙে সঞ্চালন লাইন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। রাতে কোনো কাজ করা যায়নি। সকাল থেকে শত শত শ্রমিক কাজ শুরু করেছে। তবে প্রতিকূল আবহাওয়ার কারণে কাজে বিঘ্ন ঘটছে। সকালে মোংলা ইপিজেড ও বাগেরহাট বিসিক শিল্প নগরীর সাব-স্টেশনের মাধ্যমে দেড় হাজার গ্রাহককে বিদ্যুৎ দেওয়া হয়েছিল। পরে আবার ঝড়-বৃষ্টি শুরু হলে তা বন্ধ করে দেওয়া হয়।
তিনি বলেন, এখন আবার কাজ শুরু হয়েছে। পর্যায়ক্রমে গ্রাহকদের বিদ্যুৎ দেওয়া হবে। তবে কখন সেটি দেওয়া যাবে তা বলা যাচ্ছে না।
এদিকে ঝড় চলে যাওয়ার পর বিপদ সংকেত নেমে যাওয়ায় মোংলা বন্দরে কাজ শুরু হয়েছে।
বিকালে বন্দর কর্তৃপক্ষের দেওয়া বার্তায় বলা হয়েছে, বন্দর চ্যানেলে অবস্থানরত বিদেশি জাহাজ নিরাপদে রয়েছে। জেটি এরিয়ায় সংরক্ষিত শেড, ওয়্যার হাউজ ও ইয়ার্ডে রাখা গাড়ি, মেশিনারিজ ও কন্টেইনার নিরাপদে রয়েছে। বন্দর জেটিতে অপারেশনাল কার্যক্রম এরই মধ্যে শুরু হয়েছে।
তবে বাতাসের বেগ কিছুটা তীব্র এবং নদী উত্তাল থাকার কারণে চ্যানেলের নৌযানকে নিরাপদে থাকার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
বাগেরহাটের জেলা মৎস্য কর্মকর্তা (ডিএফও) এস এম রাসেল দুপুরে বলেন, “জেলার ৯ উপজেলাতেই মাছের ঘের (বাগদা, গলদা চিংড়ি ও সাদা মাছ) রয়েছে। জোয়ারের পানিতে ২০ হাজারের বেশি মাছের ঘের ভেসে গেছে।”
এতে প্রায় একশ কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করছেন এই মৎস্য কর্মকর্তা।
ভেঙেছে বাঁধ, নেই নেটওয়ার্ক
উপকূলীয় জেলা বরগুনা রোববার রাত থেকে বিদ্যুৎবিচ্ছিন্ন। মোবাইল নেটওয়ার্কও বন্ধ হয়ে আছে। রাস্তায় গাছ পড়ে থাকায় অনেক জায়গায় সড়ক যোগাযোগ বন্ধ রয়েছে।
জেলা প্রশাসনের নিয়ন্ত্রণ কক্ষ থেকে বলা হয়েছে, প্রাথমিকভাবে ২২ হাজার ৫০৪টি ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত এবং ২ লাখ এক হাজার মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এ ছাড়া জেলার ছয় উপজেলায় অন্তত আটটি পয়েন্টে বেড়িবাঁধ ভেঙে যাওয়ার তথ্য পাওয়া গেছে।
বরগুনা জেলা প্রশাসক মোহা. রফিকুল ইসলাম বলেন, বিদ্যুৎবিচ্ছিন্ন, মোবাইল নেটওয়ার্ক না থাকা এবং রাস্তায় গাছ পড়ে যোগাযোগ ব্যবস্থা বন্ধ থাকায় ক্ষয়ক্ষতির পুরো তথ্য এ মুহূর্তে দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। তবে এবারের ঘূর্ণিঝড়ে বরগুনা ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে।
সরজমিন এবং বিভিন্ন মাধ্যমে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, আমতলী উপজেলার পশরবুনিয়া, সদর উপজেলার পালের বালিয়াতলী, মাছখালি, জাঙ্গালিয়া, পাতাকাটা, বাওয়ালকর, পাথরঘাটা উপজেলার পদ্মা, রুহিতা, জ্বীনতলা, কাকচিড়া, বামনা উপজেলার রামনা, বেতাগী উপজেলার কালিকাবাড়ী, ঝোপখালীসহ বেড়িবাঁধের একাধিক পয়েন্ট ভেঙে এবং বাঁধ উপচে জোয়ারের পানি লোকালয়ে প্রবেশ করেছে। এতে ঘর-বাড়ি পানিতে প্লাবিত হয়ে মানুষ চরম দুর্ভোগে পড়েছে।
সদর উপজেলার আয়লা-পাতাকাটা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোশাররফ হোসেন বলেন, ইউনিয়নের জাঙ্গালিয়া গ্রামে বেড়িবাঁধের তিনটি পয়েন্ট এবং একই ইউনিয়নের পাতাকাটা গ্রামের দুটি পয়েন্ট ভেঙে গিয়ে অন্তত চারটি গ্রাম পানিতে প্লাবিত হয়েছে। অসংখ্যা গাছপালা রাস্তায় পরে চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে এবং একাধিক বসতঘর বিধ্বস্ত হয়েছে।
হন্যে হয়ে মোমবাতির খোঁজে
বরিশালে ঝড়ের তাণ্ডবে এরই মধ্যে তিনজনের মৃত্যু হয়েছে। পুরো জেলা শহর ও উপকূলীয় এলাকায় বিদ্যুৎহীন অবস্থার মধ্যে রয়েছে।
বিদ্যুৎ সরবরাহকারী ওজোপাডিকো ও পল্লী বিদ্যুতের কর্মকর্তারা বলেছেন, বৃষ্টি ও ঝড়ো হাওয়া কমলে তারা কাজ শুরু করবেন।
কৃষি ও মৎস্য বিভাগের কর্মকর্তারা বলেন, যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন থাকায় তারা পুরো ক্ষয়ক্ষতির চিত্র এখনও পাননি।
জেলা প্রশাসনের নিয়ন্ত্রণ কক্ষের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা এনডিসি আবু জাফর মজুমদার বলেন, মৃত তিনজনের পরিবারকে ৫০ হাজার টাকা দেওয়া হয়েছে।
এছাড়া আশ্রয়কেন্দ্রে ১ লাখ ৮৫ হাজার ৫০০ দুর্গত মানুষ রয়ে গেছে। মোট ২ হাজার ৪৬৭টি ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত হয়েছে। সম্পূর্ণ বিধ্বস্ত হয়েছে ২৫৫টি ঘর। পুরো জেলা বিদুৎবিহীন অবস্থায় রয়েছে।
সোমাবর রাতেও ঝড়ো বাতাস ও বৃষ্টি অব্যাহত ছিল। নগরীর সিংহভাগ এলাকায় কীর্তনখোলা নদীর পানি প্রবেশ করেছে। অচল অবস্থায় নগরীর। সব দোকান ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ।
অন্ধকারে থাকা মানুষ হন্যে হয়ে মোমবাতি খুঁজতে বের হয়েছে। কিন্তু রাস্তাঘাটে পানি থাকায় ও দোকানপাট বন্ধ থাকায় তারা চাহিদা অনুযায়ী তা পাচ্ছেও না।
বাঁধ ভেঙে শতাধিক গ্রাম প্লাবিত, বিদ্যুৎহীন অবস্থা
ঝড়ো বাতাসে গাছ উপড়ে পটুয়াখালীর দুমকি ও বাউফলে দুই বৃদ্ধ নিহত হয়েছেন। এ ছাড়া রোববার কলাপাড়া উপজেলায় এক যুবক নিহত হয়েছেন।
রোববার রাত ১২টার পর থেকে সোমবার রাত ১০টা পর্যন্ত জেলার সর্বত্র বিদ্যুৎহীন অবস্থায় রয়েছে। বিদ্যুৎ না থাকায় মোবাইল নেটওয়ার্ক ও ইন্টারনেট সংযোগে দিনভর বিভ্রাট দেখা দিয়েছে।
এছাড়া ভারি বৃষ্টি ও জলোচ্ছ্বাসে দফায় দফায় প্লাবিত হয়েছে চরাঞ্চলসহ জেলার শতাধিক গ্রাম। তলিয়ে গেছে পৌরসভাসহ জেলার নিম্মাঞ্চল।
জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা সুমন চন্দ্র দেবনাথ বলেন, প্লাবিত হয়ে ও ঝড়ো বাতাসে জেলায় মোট ২৩৫টি আধাপাকা ও কাচা ঘরবাড়ি সম্পূর্ণ বিধ্বস্ত হয়েছে। আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে তিন হাজার ৫০০টি ঘরবাড়ি। এর মধ্যে বিচ্ছিন্ন দ্বীপচর রাঙ্গাবালী উপজেলা ও কলাপাড়ায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে। বহু গাছপালা উপড়ে গেছে। তবে নেটওয়ার্ক না থাকায় সঠিক তথ্য জানা যায়নি।
জলোচ্ছ্বাসে উপকূলীয় উপজেলায় বেশ কিছু পয়েন্টে বেড়িবাঁধ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তবে কী পরিমাণ ক্ষতি হয়েছে সেটি জানতে মঙ্গলবার পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে।
পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির জেলার মহাব্যবস্থাপক তুষার কান্তি মণ্ডল বলেন, প্রায় সাড়ে ছয় লাখ গ্রাহক বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন অবস্থায় আছে। নিজেদের ক্যাম্পাস আর বরগুনা সদর সাব-স্টেশনের আওতায় ২৯ হাজারের মত গ্রাহকের বিদ্যুৎ কোনোভাবে চালু আছে। বাকিরা অন্ধকারে।
তিনি বলেন, “রাতেও (সোমবার) বাইরে ঝড়ো হাওয়া, বৃষ্টি হচ্ছে। এখনও গাছপালা ভেঙে পড়ছে। এর মধ্যেই আমাদের লোকজন কাজ করছে। তবে এসব এলাকায় সঞ্চালন লাইন ঠিক করে কখন বিদ্যুৎ স্বাভাবিক করা যাবে তা এখনই বলা যাচ্ছে না। অপেক্ষা করতে হবে।”
বিদ্যুৎ সরবরাহ প্রতিষ্ঠান ওজোপাডিকোর পুটয়াখালী জেলার নির্বাহী প্রকৌশলী দ্বীন মোহাম্মদ বলেন, শহরের ২৯ হাজার গ্রাহককে রাতের মধ্যে বিদ্যুৎ দেওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে।
মাছ-ফসলের ক্ষতিতে চাষির দুশ্চিন্তা
ঘূর্ণিঝড় ও অতিবৃষ্টিতে সাতক্ষীরার মৎস্য ও কৃষি সম্পদের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। এতে সাধারণ চাষিরা দুশ্চিন্তার মধ্যে পড়েছেন।
জেলা প্রশাসক মো. হুমায়ুন কবির রাতে এক বার্তায় বলেন, ৬০৪ হেক্টর ফসলের ক্ষতি হয়েছে। ২০০ হেক্টর মৎস্য সম্পদের ক্ষতি হয়েছে। কাঁচা ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ১১৯২টি। সম্পূর্ণ ভেঙেছে ২৭৬টি।
শ্যামনগরের রাজনীতিবিদ স ম আব্দুস সাত্তার বলেন, শ্যামনগর ও আশাশুনির সাধারণ মানুষ দুর্যোগে বারবার ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এ অঞ্চলের মানুষকে নিরাপদ রাখতে টেকসই বেড়িবাঁধের কোনো বিকল্প নেই।
ঝড়ে প্রকৃত অর্থে ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা করে সহায়তা করার তাগিদ দিয়েছেন তিনি।
যশোরে ক্ষতি তুলনামূলক কম
ঝড়ের বড় ধরনের প্রভাব না পড়লেও প্রায় সাড়ে ৬ লাখ গ্রাহককে বিদ্যুতের জন্য ভোগান্তি পোহাতে হয়েছে। বিদ্যুতের তার ছিঁড়ে যাওয়া, খুঁটি উপড়ে পড়াসহ সম্ভাব্য ক্ষতি এড়াতে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ রাখতে বাধ্য হয় কর্তৃপক্ষ।
কৃষি বিভাগ বলছে, ঝড়ের তীব্রতায় উপকূল এলাকায় ভয়াবহ পরিস্থিতি থাকলেও যশোরে এর তীব্রতা সেই তুলনায় অনেক কম ছিল। যে কারণে সবজিসহ অন্যান্য ফসলের যে পরিমাণ ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কা ছিলো তা হয়নি।
যশোর শহর ১২ ঘণ্টা বিদ্যুৎবিচ্ছিন্ন অবস্থায় থাকার পর সোমবার বিকাল ৩টায় শতভাগ গ্রাহকের বিদ্যুৎ সংযোগ দেওয়া হয় বলে ওয়েস্ট জোন পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেড-(ওজোপাডিকো) ১ ও ২ এর নির্বাহী প্রকৌশলী দাবি করেন।
তবে বিদ্যুৎবিহীন গ্রামাঞ্চলে এখনও ভূতুড়ে পরিস্থিতি বিরাজ করছে।
জলাবদ্ধতায় নাকাল চট্টগ্রাম
ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে টানা ভারি বর্ষণের সঙ্গে যোগ হয়েছে জোয়ারের পানি। দুয়ে মিলে পানিতে তলিয়ে গেছে চট্টগ্রাম নগরের বিভিন্ন এলাকা।
ঝড়ের এ সময়ে নগরীতে ও বোয়ালখালী উপজেলায় খালে পড়ে দুজনের মৃত্যু হয়েছে।
তবে ঝড়ের ঝাপটা খুব একটা না লাগলেও সোমবার ভোর থেকে শহরের বিভিন্ন সড়কে পানি উঠতে শুরু করলে ভোগান্তি বাড়তে থাকে নগরবাসীর। অনেক বাসাবাড়ির নিচ তলায় পানি ঢুকেছে। বিভিন্ন সড়কে গোড়ালি থেকে কোমর সমান পানি ঠেলে যাতায়াত করতে হচ্ছে।
ঝড় শেষে সংকেত উঠলে চট্টগ্রাম বন্দরে কাজ শুরুর নির্দেশনা দিয়েছে বন্দর কর্তৃপক্ষ। চট্টগ্রামের শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে উড়োজাহাজ ওঠানামা এবং বঙ্গবন্ধু টানেল দিয়ে যানবাহন চলাচল শুরু হয়েছে।
সংবাদ সূত্র : বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম