মাগুরার মোহাম্মদপুর উপজেলার খালিয়া মধ্যেপাড়ার মোফাজ্জলের হোসেনের শাহী ওয়াল জাতের এক গরুর দাম ২৫ লাখ টাকা হেঁকেছেন এটির মালিক। তাঁর দাবি, এটিই মাগুরা জেলার সবচেয়ে বড় গরু। নাম দেয়া হয়েছে `মাগুরার ভাগ্যরাজ`।
১৬ এপ্রিল সরজমিন বিনোদপুর ইউনিয়নে খালিয়া মধ্যে পাড়া কাতার প্রবাসী মোফাজ্জেল হোসেনের বসতবাড়ি গিয়ে গরুটির দেখা মেলে। বিশাল আকৃতির গরু যার ওজন ১২০০ কেজি,গরুটির ব্যাসার্ধ ৮ ফিট,দীর্ঘ ১০ ফিট,এবং যার উচ্চতা ৬ ফিট। প্রবাসী মোফাজ্জেল হোসেন জানিয়েছেন,প্রবাস থেকে দেশে ফিরে এসে অর্থনৈতিক সচ্ছলতা ধরে রাখতে কৃষিকাজ এবং গবাদিপশু পালনের উপর নিজেকে নিয়োজিত করি। এতে করে আমি বেশ সফলতা অর্জন করেছি।গরুর পাশাপাশি মুরগির খামারও করেছি । তবে উন্নত মানের গরু পালনে অধিক মুনাফা লাভ হয়েছে। শাহীওয়াল জাতের একটি গরু দীর্ঘ চার বছর ধরে বাড়িতে পরিচর্যা করে আসছি। সর্বপ্রথম একটি গাভি ক্রয় করে আনি বাড়িতে। আর তা থেকেই প্রজননের মাধ্যমে জন্ম নিয়েছে `মাগুরার ভাগ্যরাজ` (গরু)। আসন্ন কোরবানি ঈদ উপলক্ষ্যে গরুটি ২৫ লাখ টাকা বিক্রি করার ইচ্ছা আছে। তবে ভালো দাম উঠলেই এটি বিক্রি করে দেবেন তিনি।
গরুটির দায়িত্বে থাকা প্রবাসীর স্ত্রী জানান, ৪ বছর ধরে নিজের বাড়িতে রেখে, ভুসি, খড়, ছোলা, ভুট্টা, কাঁচা ঘাস খাওয়ান তিনি। গরুটির পরিচর্যার জন্য পশু ডাক্তারের সাথে যোগাযোগ করেছেন মাঝেমধ্যে। তবে এ পশু পালনে বেগ পেতে হয়নি তাকে কখনো।
গরুটির প্রজনন ফিল্ড কর্মী সজীব হোসেন জানান,শাহিওয়াল গরুর মাংসও উৎকৃষ্ট মানের। এমনকি এটি মাংসের জন্যই অধিক জনপ্রিয়। আকৃতি বড়সড়,মোটা ও সুদর্শন হওয়ায় হাটে যে কারো দৃষ্টি আকর্ষণ করতে সক্ষম। গবাদি পশু পালনকারীরা তাদের পরিবারে অনায়াসেই এই গরুগুলো পালতে পারেন, এতে অধিক সচ্ছলতা আসবে।
শাহীওয়াল জাতের গরুর আদি বাসস্থান পাকিস্তানের পাঞ্জাবে হলেও বর্তমানে বাংলাদেশে প্রজনন পাওয়া যায়। ধীর ও শান্তপ্রকৃতির,মোটাসোটা ভারী দেহ,ত্বক পাতলা ও শিথিল হিসেবে পরিচিত পা ছোট, মাথা চওড়া,ছোট পুরু শিং,কান ঝুলানো ও চূড় বড়। নাভি ঝুলানো,গলকম্বল বৃহদাকার যা ঝুলে থাকে। লেজ লম্বা,লেজের আগায় দর্শনীয় একগোছা কালো চুল থাকে দেহের রং লাল, কালচে,তবে কখনও কখনও গাঢ় লাল বা লালের মাঝে কালো ছাপ দেখা যায়। এছাড়া গাভীর ওলানের বাঁটগুলো লম্বা,মোটা ও সমান আকৃতি বিশিষ্ট হয়ে থাকে। মাংসের পরিমাণ দেশী গরুর চেয়ে বেশি এবং মোটাতাজাকরণে বেশ উপযোগী।
তবে এ বিষয় মাগুরা জেলা প্রাণিসম্পদ অফিসার ডাঃ মিহির কান্তি বিশ্বাস জানান,এটি তার সফলতার কাহিনি, কৃত্রিম প্রজননের মাধ্যমে জাত উন্মোচন করেছেন। মূলত দেশী গরু থেকে এতটা ফল পাওয়া সম্ভব না। তিনি দেশীয়ভাবে প্রাকৃতিক খাদ্য খাবারের খাওয়ানোর পাশাপাশি আমাদের সাথে পরামর্শ করে লালন পালন করেছেন গরুটি। আমরা সঠিকভাবে ভ্যাকসিন প্রদান করেছি। পাশাপাশি গরুটির মালিক আমাদের দিকনির্দেশনা অনুযায়ী নিয়মিতভাবে পরিচর্যা করে সফল হয়েছেন। তিনি আরো বলেন এ জেলার মধ্যে যদি কেউ অর্থনৈতিকভাবে এভাবে স্বাবলম্বী হতে ইচ্ছুক হন তাহলে তারা বসতবাড়িতে গরু পালন করতে পারেন। প্রাণিসম্পদ রক্ষা এবং অর্থনৈতিক স্বাবলম্বী করতে অবশ্যই আমাদের সহযোগিতা তাদের জন্য সর্ব সময় থাকবে।