আবহাওয়া অনুকূল থাকায় বরগুনার আমতলী উপজেলায় তরমুজের বাম্পার ফলন হয়েছে।তবে গত বছর অতি বৃষ্টি,ঝড়,জলোচ্ছ্বাসসহ প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে তরমুজ চাষে লোকসান গুনতে হয়েছিল চাষিদের। তাই গত বছরের তুলনায় এ বছর আবাদ কম হয়েছে। এবার ফলন ভালো এবং দামও বেড়েছে ২ থেকে ৩ গুণ। ইতোমধ্যে ক্ষেতের তরমুজ পরিপক্ক ও ভালো সাইজের হওয়ায় বিক্রি শুরু হয়েছে। বছরের শুরুতে বেশি দামে বিক্রি করতে পেরে খুশি কৃষকরা। তাই উৎপাদন খরচ বাদ দিয়ে বেশ লাভবান হবেন বলে জানান কৃষকরা।
উপজেলা কৃষি অফিসের তথ্যমতে, আমতলী উপজেলায় ৪ হাজার ৫’শ ৯০ হেক্টর জমিতে তরমুজের আবাদ হয়েছে। যা গতবছরের তুলনায় ১ হাজার ৭’শ ৫৫ হেক্টর কম।
সরেজমিনে বিভিন্ন খেত ঘুরে দেখা গেছে, গুলিশাখালী ইউনিয়নের আঙুলকাটা গ্রামের মিজানুর খাঁনের খেত থেকে তরমুজ সংগ্রহ করে ট্রাকে বোঝাই করা হচ্ছে। এসব তরমুজ নারায়ণগঞ্জে যাবে বলে জানান তরমুজ পাইকার সাইফুল।
মিজানুর খাঁন বলেন, সাত-আট বছর ধরে তরমুজ চাষ করছি। এবছর আগাম জাতের তরমুজ চাষ করেছি। মাশাল্লাহ এবছর ফলনও ভালো হয়েছে। গত বছর তরমুজ চাষ করে লোকসানে পড়তে হয়েছিল। এ বছর ছয় একর জমিতে তরমুজের আবাদ করেছি। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় ভালো ফলন হয়েছে এবং বেশ লাভ হবে। ছয় একর জমিতে সাত লাখ টাকা খরচ হয়েছে। সার, কীটনাশকের দাম বেশি হওয়ায় খরচ একটু বেশি হয়েছে।
হলদীয়া ইউনিয়নের পূর্বচিলা ঘুঘুমারি গ্রামের শাহাবুদ্দিন হাওলাদার জানান, চলতি মৌসুমে তিনি ৩২ একর জমিতে তরমুজের আবাদ করেছেন। গত ১৫ বছর যাবত তিনি তরমুজ চাষ করে আসছেন। এ বছর অর্ধেকের কম জায়গার তরমুজ ইতোমধ্যে বিক্রি করেছেন ৫০ লাখ ২০ হাজার টাকায়। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় তরমুজের সাইজ বড় হয়েছে বিধায় ভালো দাম পেয়েছেন। একেকটা তরমুজ ১৪/১৫ কেজি পর্যন্ত হয়েছে। বাকি যে তরমুজ খেতে আছে সেটার দাম কিছুটা নিম্নমুখী বলে জানান শাহাবুদ্দিন।এছাড়া ও একই গ্রামের শাহাবুদ্দিন ,রুহুল আমিন ,মিজানুর,দাদান আকন ,দুলাল চকিদার সবাই বেশ খুশি তরমুজের ভালো ফলনে।
আঠারগাছিয়া ইউনিয়নের সোনাখালী গ্রামের কৃষক জাহাঙ্গীর হাওলাদার বলেন, তরমুজ আবাদ করে গত বছর লোকসান গুনলেও এবার লাভের মুখ দেখবো। একই গ্রামের কৃষক হানিফ বলেন, গত বছর তরমুজ চাষ করে লোকসান গুনতে হয়েছে। স্ত্রীর গহনা বিক্রি করে ঋণ পরিশোধ করতে হয়েছে। লোকসানের ভয়ে এ বছর তরমুজ আবাদ করিনী। গত বছর তিনি ১৮ লাখ টাকা ব্যয় করে ১৭ একর জমিতে তরমুজ চাষ করেছেন। অতিবৃষ্টির কারণে সব তরমুজ ক্ষেতেই নষ্ট হয়ে গেছে। বিক্রি করে মাত্র এক লাখ টাকা পেয়েছিলেন। তিনি বলেন, এবার লোকসানের ভয়ে তরমুজ চাষ করিনি।
তবে,বাজারে তরমুজের দামে ক্ষুব্ধ স্থানীয় ক্রেতারা। মাঝারি সাইজের একটি তরমুজ ৩০০ থেকে ৪০০ টাকা এবং বড় সাইজের একটি তরমুজ ৬০০ থেকে ৭০০ টাকায় কিনতে হচ্ছে। নিম্ন আয়ের মানুষের জন্য তরমুজ কেনা অসম্ভব হয়ে উঠেছে। জসিম নামে এক ক্রেতা বলেন, রোজার সময় তরমুজের বেশ চাহিদা। তবে এবার তরমুজের যে দাম তাতে কিনে খাওয়া কোনোভাবেই সম্ভব নয়। দাম কমলে পরিবারের সবাইকে নিয়ে খাব।
আড়তদার হারুন অর রশিদ বলেন, এ বছর বাজারে তরমুজ কম। আর যা আছে, তাও চলে যাচ্ছে বিভিন্ন জেলায়। কৃষকদের কাছ থেকেও কিনতে হচ্ছে বেশি দামে। কাজেই কম দামে তরমুজ বিক্রি করার সুযোগ নেই।
আমতলী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা ঈছা বলেন, যেসব চাষি আগাম জাতের তরমুজ চাষ করেছেন, তারা গত সপ্তাহ থেকে তরমুজ তুলতে শুরু করেছেন। দুই সপ্তাহ পর থেকে পুরোদমে তরমুজ তোলা শুরু হবে। তরমুজ চাষে খরচ কম লাভ বেশি। এ কারণে এখানকার কৃষকেরা তরমুজ চাষে আগ্রহী বেশি। কৃষি কর্মকর্তারা মাঠপর্যায়ে কৃষকদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখেন ও কৃষকদের বিভিন্ন সহায়তা করা হয় বলে জানান তিনি।