জমি দখল করতে বেপরোয়া বিএনপি ক্যাডার-ভূমিদস্যু আর্জেন্ট,সন্ত্রাসী বাহিনীর দৌরাত্ম্যে আতঙ্কে জেলাবাসী তার এমন কার্যকলাপের প্রতিকার চেয়ে ভুক্তভোগী পরিবার ও স্থানীয়দের সংবাদ সম্মেলন।
আত্মীয়-স্বজনদের জমি অবৈধভাবে জোরপূর্বক দখল করতে বেপরোয়া হয়ে পড়েছেন চাঁপাইনবাবগঞ্জের গোমস্তাপুরের বিএনপি ক্যাডার ও ভূমিদস্যু সোহেল আমান আর্জেন্ট। জোরপূর্বক জমি দখলে বাধা দিতে গেলে উল্টো স্বজনদের পরিবারের নামে মিথ্যা মামলা,হামলা করার অভিযোগ উঠেছে সোহেল আমান আর্জেন্টের বিরুদ্ধে। এনিয়ে আতঙ্ক ও নিরুপায় হয়ে নিরাপত্তাহীনতায় থাকা অভিযুক্ত ব্যক্তির বিরুদ্ধে সকল অভিযোগ তুলে ধরে কয়েকটি পরিবার সংবাদ সম্মেলন করেছেন।
বুধবার (২৪ জানুয়ারী) দুপুরে চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলনে সুষ্ঠু তদন্ত করে জমি রক্ষা ও সোহেল আমান আর্জেন্টের বিরুদ্ধে কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানানো হয়। সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন,গোমস্তাপুর উপজেলার নয়াদিয়াড়ী গ্রামের সাইফুদ্দিন মন্ডলের ছেলে মানিরুদ্দিন মন্ডল সিপ্লব।
সংবাদ সম্মেলনে মানিরুদ্দিন মন্ডল সিপ্লব অভিযোগ করে বলেন,বর্তমানে আমরা তার ভয়ে অনেক আতঙ্কিত ও ভয়াবহ সময় পার করছি। একই গ্রামের মো.আমানুল্লাহ আমান নামক ব্যক্তি ১৯৭২ সালে ৫২ বিঘার দফায় দফায় কয়েকটি জাল দলিল সৃষ্টি করে। সেইসব দলিলটি ২০২২ সালে মেয়ে রিজিয়া আমান ও তার ছেলে সোহেল আমান আর্জেন্টকে রেজিস্ট্রি করে দেয়ার কিছুদিন পর মারা যান তিনি। বিষয়টি জানতে পেরে আমরা গোমস্তাপুর আমলী আদালতে একটি মামলা দায়ের করি।
তিনি আরো বলেন,মামলাটি পুলিশ তদন্ত করে তাদের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ সত্য প্রমাণিত হওয়ায় চীফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে চার্জশিট দাখিল করে। চার্জশিট দাখিলের পর থেকেই বিবাদীরা আমাদের বিরুদ্ধে নানারকম হুমকি-ধামকি,ভয়ভীতি ও উস্কানিমূলক বক্তব্য দিচ্ছে। এনিয়ে আতঙ্কের মধ্যে দিন পার করছি আমরা।
মানিরুদ্দিন মন্ডল সিপ্লব বলেন,জাল দলিল তৈরিকারক আমানুল্লাহ আমানের মৃত্যুর পরদিন তার ছেলে সোহেল আমান আর্জেন্ট তার নিজের ফেসবুক আইডি থেকে পোস্ট করেন,”আমার বাবার হুকুম আমি পালন করব এবং চরম প্রতিশোধ গ্রহণ করব।” বিষয়টি আমাদের উদ্দেশ্যে দেয়া হয়েছে,জানতে পেরে গত ০২ জানুয়ারী তার বিরুদ্ধে সদর মডেল থানায় জিডি দায়ের করি। কিন্তু জিডির করার সাথে সাথেই আরো বেপরোয়া হয়ে উঠেন সোহেল আমান আর্জেন্ট।
সংবাদ সম্মেলনে তারা আরো বলেন,জিডি করার দিনই সোহেল আমান আর্জেন্টের সহযোগী সোহেল রানাসহ তার সন্ত্রাসী লাঠিয়াল বাহিনী নিয়ে আমাদের ২.৬৫ একর সম্পত্তি দখলের চেষ্টা করতে যায়। এসময় বাধা দিতে গেলে আমাদের উপর ব্যাপক হামলা চালায় ও মারধর করে। এতে আমাদের কয়েকজন গুরুতর আহত হয়। আমাদের উপর হামলা চালিয়ে উল্টো আমাদের বিরুদ্ধেই নাচোল থানায় একটি মিথ্যা মামলা দায়ের করে। মিথ্যা বানোয়াট মামলায় আমাদের দোষী প্রমাণিত না করতে পেরে গত ১৬ জানুয়ারি রাত্রে সোহেল আমান আর্জেন্ট ও রিজিয়া আমান আমাদেরকে আতঙ্কিত ও ভয়ভীতি দেখাতে বোমার বিস্ফোরণ ঘটায়। এমনকি ভুক্তভোগী পরিবারের স্বজন হওয়ার সুবাদে চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা শহরের লাইফ কেয়ার হাসপাতালের ব্যবস্থাপনা পরিচালক নাসির উদ্দিনকে নিয়েও মিথ্যা তথ্য দিয়ে সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য দিয়ে হেয় প্রতিপন্ন করেন সোহেল আমান আর্জেন্ট। এমন একজন স্বনামধন্য ব্যবসায়ী ও বিশিষ্ট সমাজসেবককে নিয়ে এমন মিথ্যা বানোয়াট তথ্য তুলে ধরার প্রতিবাদ ও নিন্দা জানিয়েছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। সোহেল আমান আর্জেন্টের বিরুদ্ধে দ্রুত সময়ের মধ্যে আইনানুগ ব্যবস্থা না দিলে কঠোর আন্দোলনের হুশিয়ারী দেন সচেতন নাগরিক সমাজ।
ভুক্তভোগী পরিবারের দাবি,এসব ঘটনাকে ভিন্ন খাতে প্রভাবিত করতে গত ২০ জানুয়ারী চাঁপাইনবাবগঞ্জের একটি অফিসে মিথ্যা বানোয়াট তথ্য দিয়ে পুলিশের বিরুদ্ধে বিভ্রান্তিকর ও মানহানিকর বক্তব্য দিয়ে সংবাদ সম্মেলন করেন,বিএনপি ক্যাডার,ভূমিদস্যু সোহেল আমান আর্জেন্ট। সঠিক তদন্তের কারনে পুলিশের বিভিন্ন কার্যক্রম নিয়ে প্রশাসনকে প্রশ্নবিদ্ধ ও হেয় করে বক্তব্য রাখেন সোহেল আমান আর্জেন্ট। আমরা তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানায়। সেই সাথে তাকে দ্রুত আইনের আওতায় এনে কঠোর শাস্তির ব্যবস্থা করে আমাদেরকে নিরাপত্তা প্রদানের জোর দাবি জানায়।
ভুক্তভোগী পরিবার,স্থানীয় বাসিন্দা ও তার আত্মীয় স্বজন সূত্রে জানা যায়,বিএনপির ক্যাডার সোহেল আমান আর্জেন্ট একজন প্রকৃত ভূমিদস্যু,মাদকসেবি ও মাদক ব্যবসায়ী কর উত্তোলনকারী।দীর্ঘদিন ধরে সে সীমান্তবর্তী জেলা চাঁপাইনবাবগঞ্জে মাদকের ব্যবসার সাথে সম্পৃক্ত। এমনকি সাম্প্রতিক সময়ে মাদক গ্রহণকালের ছবি ও ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক এবং বিভিন্ন অনলাইন ও প্রিন্ট গণমাধ্যমে ভাইরাল হয়। তার বিরুদ্ধে হত্যা, গুম,মাদক,সন্ত্রাস,সরকার বিরোধী অগ্নিসংযোগের একাধিক মামলা রয়েছে। তার বিরুদ্ধে,মুখ খুললেই বোমা হামলা ও মারধরের হুমকি দেন।
বিএনপির ক্যাডার হিসেবে গ্রামের বাড়ি নয়াদিয়াড়ির স্থানীয় লোকজন তার অত্যাচারে অতীষ্ঠ। জোরপূর্বক জমি বাগান বাড়ি দখল ও সন্ত্রাসী কার্যক্রম,চাঁদাবাজির কারনে গত এক যুগ আগে তাকে এলাকা ছাড়া করে স্থানীয় গ্রামবাসীরা। গ্রাম থেকে বিতাড়িত হয়ে আশ্রয় নেয় চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা শহরে। তবে এতেও থামেনি সোহেল আমান আর্জেন্টের সন্ত্রাসী কার্যক্রম। জেলা শহরে গড়ে তুলেছেন একাধিক ক্যাডার মাস্তান বাহিনী। এমনকি গত জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে ঢাকায় বিএনপির সমাবেশে চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে তার নেতৃত্বে শতাধিক সন্ত্রাসী বাহিনী যায়। পরে ঢাকার বিভিন্ন সড়কের বাসে অগ্নিসংযোগ ও পুলিশের উপর হামলার নেতৃত্ব দেয় সোহেল আমান আর্জেন্ট। সেসময় পালিয়ে গিয়ে দীর্ঘদিন আত্নগোপনে ছিলেন বিএনপি ক্যাডার সোহেল আমান আর্জেন্ট। সরকার ও দেশের বিরুদ্ধে বিভিন্ন ষড়যন্ত্রে লিপ্ত থাকার দায়ে তাকে দ্রুত গ্রেপ্তারের দাবি জানান জোরালো ভাবে স্থানীয়দের।
সংবাদ সম্মেলন আয়োজনের পরপরই ভুক্তভোগী পরিবারকে বিভিন্ন মাধ্যমে প্রাণনাশের হুমকি দিচ্ছেন সোহেল আমান আর্জেন্ট। এসময় তিনি বলছেন,এসব সংবাদ সম্মেলনে কিছুই হবে না। বরং পুলিশের।কোন লোক আমার বিরুদ্ধে কাজ করলে একটা ফোন দিয়ে তাকে চাকরিচ্যুত করব এবং পুলিশের বিরুদ্ধে আমি সংবাদ সম্মেলন করে বক্তব্য দিয়েছি সাংবাদিকদের সামনে তারা আমার বিরুদ্ধে কিছুই করতে পারেনি।