ক্রিকেটার হিসেবে তার আকাশছোঁয়া জনপ্রিয়তা। বর্তমান প্রজন্মের তরুণদের কাছে তিনি এমনিতেই ক্রিকেটার, অধিনায়ক ছাপিয়ে আরও বড় কিছু। বলা যায় বর্তমান সময়ে তরুণদের অনুকরণীয় আদর্শ।
ক্রীড়া অনুরাগী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাই মাগুরা-১ আসনে সাকিব আল হাসানকেই মনোনয়ন দেন। বয়সে তরুণ ও রাজনীতির মাঠে নতুন সাকিব রাজনৈতিক বক্তব্যে তেমন পটু নন, তা জেনে-বুঝেই প্রধানমন্ত্রী সাকিবের নির্বাচনী এলাকায় নিজ গিয়ে তাকে জনসাধারণের কাছে আলাদাভাবে উপস্থাপন করেছেন। সাকিবকে শুভ কামনা জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছিলেন, ‘ক্রিকেটার সাকিব খেলার মাঠে ছক্কা হাঁকাতে দারুণ দক্ষ, নির্বাচনে ছক্কা হাঁকালেই চলবে।’
মোটকথা, দেশবরেণ্যে ও জননন্দিত ক্রিকেটার সাকিবের নৌকা প্রতীক নিয়ে নির্বাচনে জয়ের বিষয়ে তাই তেমন কোনো সংশয় ছিল না। শেষ পর্যন্ত সাকিব প্রধানমন্ত্রীর আস্থার প্রতিদান দিয়ে বিপুল ভোটে বিজয়ী হয়ে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন।
কিন্তু নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি সাকিব আজ সোমবার সকালেই চমকে দিলেন সবাইকে। নাহ! রাজনীতি বা ভোটের মাঠের চমক নয়। জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পরদিনই সকালে মাগুরা থেকে ঢাকা এসে দুপুরে শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে অনুশীলন করতে নেমে পড়েন। অনুশীলনের মাঠে এসেই সবাইকে চমকে দিলেন তিনি।
নির্বাচন উপলক্ষে রাতদিন হাড়ভাঙা খাটুনি, এদিক-ওদিক ছোটাছুটি, জনসংযোগ, পথসভায় ভাষণ দেওয়া, বাড়ি বাড়ি যাওয়া, গভীর রাত অবধি নির্বাচনের কাজে ব্যস্ত থাকার পর কেউ সরাসরি মাগুরা থেকে ঢাকা এসে অনুশীলন করতে পারেন, তা সাকিবকে না দেখলে হয়তো কারোরই বিশ্বাস হতো না।
কিন্তু সে বিস্ময়কর সত্য হলো, আজ সোমবার দুপুরে শেরে বাংলার ইনডোরে রুদ্ধদ্বার অনুশীলন করেছেন তিনি এবং যথারীতি সেই অনুশীলন পর্বটায় সঙ্গে ছিলেন তার গুরু, মেন্টর ও বিকেএসপির সাবেক শিক্ষক নাজমুল আবদিন ফাহিম।
রাজনীতির মাঠ আর ভোটযুদ্ধে জিতে রাতটুকু পার করে মাঠে, কারোরই বিশ্বাসই হচ্ছিল না। খোদ ফাহিম নিজেও কি বিশ্বাস করছিলেন?
এ প্রশ্ন শুনে ফাহিমের অকপট স্বীকারোক্তি, ‘না না, আমি কিছুতেই ভাবিনি যে একেবারে আজই প্র্যাকটিসে নেমে পড়বে সাকিব। মনে করেছিলাম, নির্বাচনী ধকল শেষে অন্তত কয়েকদিন বিশ্রাম নেবে। এরপরে যখন তার বিপিএলের দল রংপুর রাইডার্সের অনুশীলন শুরু হবে, হয়তো তখন যোগ দেবে; কিন্তু ঠিক নির্বাচনের পরদিনই যখন প্র্যাকটিসের জন্য আমাকে ফোন করলো তখন অবাক না হয়ে পারিনি।’
আগের রাতে নির্বাচনে জিতে পরদিন আপনার ছাত্র সাকিব সুবোধ বালকের মতো চলে আসলো অনুশীলনে। আপনার কেমন লাগলো? ফাহিম স্যারের অনুভূতিটা একটু বলবেন কি?
তিনি বলেন, ‘ক্রিকেটের ব্যাপারে সাকিবের মনোযোগ, আকর্ষণ কত, তার ভালো খেলার ইচ্ছে ও আকাঙ্ক্ষা কত তীব্র? তা নতুন করে জানা হলো। আগেও অনেক সময় দেখেছি, সাকিব অনেক কিছুর মাঝেও নিজের খেলাটা খেলে দিয়েছে। ভালোও করেছে। সাকিব এক দুই বছর ওই নামেই খেলে দিতে পারতো। সে ইচ্ছে করলেই আরও ক’দিন পরে প্র্যাকটিস শুরু করতে পারতো। নিজে বিপিএল দলের অনুশীলনে এক দুদিন পরে যোগ দিলেও বলার কিছু ছিল না। কিন্তু সে তা করেনি।’
‘ঠিক আগেভাগে চলে এসেছে। কোন দলের প্র্যাকটিস শুরুর আগেই ভোটের মাঠ থেকে ক্রিকেটের মাঠে সাকিব। ও জানে বেশ কিছুদিন আমি মাঠের বাইরে ছিলাম। নিজেকে আবার আগের জায়গায় নিতে একটু বেশি ও বাড়তি পরিশ্রম ও অনুশীলন দরকার। সেই উপলব্ধি থেকেই আসলে আগে ভাগে চলে আসা। এবং আলাদাভাবে একা প্র্যাকটিসে নামা। আজ সোমবার প্র্যাকটিস করলো। কাল মঙ্গলবার সকালেও অনুশীলন করবে। আজ প্রাথমিকভাবে ব্যাটিংটা প্র্যাকটিস করেছে।