বহু জল্পনা-কল্পনার অবসান ঘটিয়ে অনুষ্ঠিত হয়ে গেল দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ভোটগ্রহণ। বিকেল ৪টা বাজার সঙ্গে সঙ্গে শেষ হলো জনগণের রায় জানানোর পর্ব। এবার চলছে গণনা পর্ব।
বিগত প্রতিটি নির্বাচনের মতোই ঘটনাবহুল ছিল দিনটি। ঘটেছে বিচ্ছিন্ন কিছু গোলযোগও। তবে সার্বিক দিক থেকে বেশ শান্তিপূর্ণই ছিল ভোটকেন্দ্রগুলোর পরিবেশ। বিভিন্ন স্থানের কেন্দ্র ঘুরে ভোটের পরিবেশ নিয়ে সন্তোষ প্রকাশ করেছেন বিভিন্ন দেশের পর্যবেক্ষকরাও। এর অন্যতম কৃতিত্ব নির্বাচন কমিশন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর। তাদের সজাগ দৃষ্টি ও তৎপরতাতেই সম্ভব হয়েছে শান্তিপূর্ণ ভোটগ্রহণ। তাছাড়া দেশের অন্যতম প্রধান বিরোধী দল বিএনপি ও তাদের সমমনা দলগুলো নির্বাচনে অংশ না নেওয়ায় প্রতিদ্বন্দ্বিতা হয়েছে মূলত আওয়ামী লীগ মনোনীত এবং একই দলের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত স্বতন্ত্র প্রার্থীদের মধ্যেই।
দুপুর একটার দিকে নারায়গঞ্জের বেশ কয়েকটি ভোট কেন্দ্র পরিদর্শন করে ভোটের সার্বিক পরিস্থিতিতে তারা সন্তোষ প্রকাশ করেন যুক্তরাষ্ট্র, জার্মানি ও আয়ারল্যান্ডের পর্যবেক্ষক দল। বিষয়টি আন্তর্জাতিকভাবে তুলে ধরবেন বলেও জানান পর্যবেক্ষক দলটির সদস্যরা। একইভাবে সন্তোষ প্রকাশ করেছেন বিদেশি অন্য ১২৪ পর্যবেক্ষকও।
এদিকে অনিয়মের অভিযোগে কয়েকটি কেন্দ্রের ভোট বাতিল ও স্থগিত করা হয়। এ ছাড়া কারচুপি ও ভয়ভীতি দেখানোর অভিযোগ তুলে ভোট বর্জন করেছেন বেশ কয়েকজন প্রার্থী।
ইসির দেওয়া তথ্যমতে, নির্বাচন ঘিরে সারাদেশে পাঁচ লাখ ১৬ হাজার আনসার, এক লাখ ৮২ হাজার ৯১ পুলিশ, ৪৬ হাজার ৮৭৬ বিজিবি, দুই হাজার ৩৫০ কোস্টগার্ড এবং ৭০০ এর বেশি র্যাব টহলে ছিল। তাদের সঙ্গে ভোটের মাঠে ছিল সশস্ত্র বাহিনী। এ ছাড়া আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নের সদস্যরাও মাঠে ছিল। এ ছাড়া প্রতিকেন্দ্রে ছিল ১৫ থেকে ১৭ জন নিরাপত্তা সদস্য।
এবার নির্বাচনে মোট ভোটার ১১ কোটি ৯৭ লাখ। এর মধ্যে ৬ কোটি ৭ লাখ ৭১ হাজার ৫৭৯ জন পুরুষ, ৫ কোটি ৮৯ লাখ ১৯ হাজার ২০২ জন নারী এবং তৃতীয় লিঙ্গের ভোটারের সংখ্যা ৮৫২। মোট ভোটকেন্দ্র ৪২ হাজার ১০৩টি। ভোটকক্ষ ২ লাখ ৬১ হাজার ৯১২টি। ভোট হচ্ছে ব্যালট পেপারে।
এবারের নির্বাচনে ৩০০ আসনের মধ্যে ভোট হয়েছে ২৯৯ আসনে। স্বতন্ত্র প্রার্থীর মৃত্যুর কারণে নওগাঁ-২ আসনের ভোটগ্রহণ স্থগিত করা হয়। নির্বাচনে ২৮টি দল অংশগ্রহণ করে। এর মধ্যে দলীয় প্রার্থী ১ হাজার ৫৩৪ জন এবং স্বতন্ত্র ৪৩৬ জন। নির্বাচনে সবচেয়ে বেশি ২৬৬ জন প্রার্থী দিয়েছে আওয়ামী লীগ। এ ছাড়া দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ২৬৫ জন প্রার্থী দিয়েছে জাতীয় পার্টি এবং তৃতীয় সর্বোচ্চ ১৩৫ জন প্রার্থী রয়েছেন ‘সোনালী আঁশ’ প্রতীক নিয়ে নির্বাচনে আসা তৃণমূল বিএনপি।
এদিকে বিএনপিসহ ৬০টি দল নির্বাচন বর্জন করেছে। দলটি সরকার পতনের এক দফা দাবিতে দীর্ঘদিন আন্দোলন করে সফলতা না পেয়ে নির্বাচনের দুই মাস আগ থেকে হরতাল-অবরোধের পথ বেছে নেয়। এতে সরকারকে চাপে ফেলতে না পেরে ভোট বর্জনের আহ্বান জানিয়ে গত ২০ ডিসেম্বর ‘অসহযোগ আন্দোলনের’ ডাক দেয় দলটি। পাশাপাশি সরকারকে সকল প্রকার কর, খাজনা, পানি, গ্যাস এবং বিদ্যুৎ বিল দেওয়া স্থগিত রাখার অনুরোধ জানায় দলটি।
www.dailykhoborerdak.com
ই-মেইল:
news.Khoborerdak@gmail.com