কমলা ভেবে এত দিন সবাই যে ফল খেয়েছি, সেটির নাম মূলত মান্দারিন। আর ঠিক ও রকমই দেখতে আরেকটি জাতের নাম ট্যাঞ্জারিন। মোট কথা, বাজারে কমলা নামে যেসব ফল আমরা দেখি, সেগুলো হয় মান্দারিন, নয়তো ট্যাঞ্জারিন। আর এটা তো সবারই জানা, অরেঞ্জ নামেও একটি ফল আছে। হিসাবমতো এই অরেঞ্জকেই কিন্তু বাংলায় কমলা ডাকার কথা ছিল। কিন্তু মান্দারিন এবং ট্যাঞ্জারিনকেই আমরা কমলা নামে চিনে এসেছি।
মান্দারিন, ট্যাঞ্জারিন আর অরেঞ্জ বাইরে থেকে দেখতে প্রায় একই রকম। তবে এদের প্রজাতি আলাদা। উৎপত্তিগত দিক থেকেও কিছু পার্থক্য রয়েছে।
মান্দারিন
মান্দারিন কমলা দেখতে অন্যান্য কমলার মতোই। আকারে কিছুটা ছোট। ওপর আর নিচের দিকে কিছুটা চাপা, অর্থাৎ কমলাকৃতি বলতে যা বুঝি (উল্টো করে ভাবলে পৃথিবীর মতো বলা চলে)। ফল পাকার পর খোসা বেশ পাতলা হয়। সহজে ছাড়ানো যায়। কোয়াগুলো স্বাদে মিষ্টি, তবে কোনো কোনো ক্ষেত্রে টকভাব থাকতে পারে। সাইট্রাসের প্রজাতিগুলোর মধ্যে মান্দারিন বেশ প্রাচীন। সাইট্রন আর পমেলোর সংকর বলে ধারণা করেন অনেকে। পরবর্তী সময়ে মান্দারিন থেকে কমলার আরও অনেক জাত তৈরি করা হয়।
বলা যেতে পারে, আমরা বাজারে কমলার যত প্রজাতি দেখি, অধিকাংশই মান্দারিন থেকে এসেছে। হাজার তিনেক বছর আগে ভারতে মান্দারিন কমলার চাষ শুরু হয় বলে মনে করা হয়। সেখান থেকে চীন এবং চীন থেকে ইউরোপ-অস্ট্রেলিয়া হয়ে বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়ে বলে নাম হয় মান্দারিন। নামকরণের আরেকটি তত্ত্ব হলো, সে সময় ফ্রান্সে চীনাদের একটি গোষ্ঠী কমলা রঙের ঢোলাঢালা পোশাক পরত। রঙের সঙ্গে মিল থাকায় ফলটির নামও মান্দারিন করা হয়।
ট্যাঞ্জারিন
ট্যাঞ্জারিন ফলটি যুক্তরাষ্ট্রে প্রথম ফ্লোরিডা অঙ্গরাজ্যে চাষ করা হয়। ফলটির নামকরণ করা হয়েছে মরক্কোর ট্যাঞ্জিয়ার শহরের নামানুসারে। এটি সাইট্রাস ট্যাঞ্জারিনা প্রজাতির মধ্যে পড়ে। স্বাদ তুলনামূলক মিষ্টি। খোসা বেশ পাতলা।
খোসা ছাড়িয়ে নিলে ভেতরে অনেকগুলো কোয়া থাকে, যা সহজেই আলাদা করা যায়। অক্টোবর থেকে জানুয়ারি মাস পর্যন্ত ট্যাঞ্জারিনের মৌসুম। পাকলে ফল বেশ নরম থাকে। দেখতে কিছুটা লালচে কমলা বর্ণের হয়।
অরেঞ্জ
অরেঞ্জের উৎপত্তি এশিয়া মহাদেশে। অনেকের মতে ইন্দোনেশিয়া ও চীনের দক্ষিণাঞ্চলে। অরেঞ্জ হলো সাইট্রাস সাইনেসিস প্রজাতির ফল। মজার ব্যাপার, অরেঞ্জ হলো পমেলো ও মান্দারিন ফল দুটির সংকর। সাধারণত রাউন্ড অরেঞ্জ, ব্লাড অরেঞ্জ ও অ্যাসিডলেস বা সুইট অরেঞ্জ—এই চার জাতের অরেঞ্জ পাওয়া যায়। অরেঞ্জের মৌসুম নভেম্বর থেকে শুরু হয়ে মার্চ পর্যন্ত। পাকা অবস্থায় এগুলো ভারী ও তুলনামূলকভাবে শক্ত হয়।
প্রকারভেদে রঙের তারতম্য দেখা যায়। তবে ব্লাড অরেঞ্জ ছাড়া বাকিরা দেখতে হলদে কমলা বর্ণের। খোসা শক্ত হয়। ভেতরে কোয়া থাকলেও তা সহজে আলাদা করা যায় না। অরেঞ্জে ট্যাঞ্জারিনের তুলনায় প্রায় দ্বিগুণ ভিটামিন সি থাকে। আমরা বাজারে মাল্টা নামে যে ফল দেখি, তার সঙ্গে এই অরেঞ্জের মিল সবচেয়ে বেশি।
জেনে অথবা না জেনেই হোক, মান্দারিন এবং ট্যাঞ্জারিনকে আমরা কমলা নামে ডেকেছি। কমলা বললে চোখের সামনে কোয়াওয়ালা একটা ফলই ভেসে উঠবে।